ভিটামিন হল এমন এক ধরনের জৈব যৌগ যা আমাদের শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সঠিক পরিমাণে ভিটামিন গ্রহণ করলে শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকে। ভিটামিন মূলত দুই ধরনের – জলে দ্রাব্য এবং স্নেহ পদার্থে দ্রাব্য। জলে দ্রাব্য ভিটামিনগুলো শরীরে জমা হয় না, তাই এগুলো প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, স্নেহ পদার্থে দ্রাব্য ভিটামিনগুলো শরীরে চর্বির মধ্যে জমা থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়।
নিচে বিভিন্ন ভিটামিনের রাসায়নিক নাম, দ্রাব্যতা, উৎস এবং অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ভিটামিন A (রেটিনল)
দ্রাব্যতা: স্নেহ পদার্থে দ্রাব্য
উৎস: গাজর, কুমড়ো, পাকা পেঁপে, ঘি, মাখন, সবুজ শাকসবজি, আম, কড ও হাঙর মাছের যকৃৎ তেল
অভাবজনিত রোগ: রাতকানা, চোখে ছানি, ত্বকের শুষ্কতা, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা
২. ভিটামিন B1 (থিয়ামিন)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: ঢেঁকিছাটা চাল, বাদাম, ডাল, ফুলকপি, লেটুস শাক
অভাবজনিত রোগ: বেরিবেরি, ক্ষুধামান্দ্য, স্নায়ুদৌর্বল্য, হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা
৩. ভিটামিন B2 (রাইবোফ্লাভিন)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: যকৃৎ, বৃক্ক, ডিমের সাদা অংশ, পালং শাক, দানাশস্য
অভাবজনিত রোগ: মুখে ঘা, ঠোঁটে ফাটা, চোখের সমস্যা
৪. ভিটামিন B3 (নিয়াসিন)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: ডিম, দানাশস্য, মটর, রাঙা আলু
অভাবজনিত রোগ: পেলেগ্রা, অন্ত্রে ঘা, স্নায়ুক্ষয়, চর্মরোগ
৫. ভিটামিন B5 (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: যকৃৎ, রাঙা আলু, আখের গুড়
অভাবজনিত রোগ: অনিদ্রা, স্নায়ুদৌর্বল্য, ত্বকের সমস্যা
৬. ভিটামিন B6 (পাইরিডক্সিন)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ইস্ট, অঙ্কুরিত শস্য
অভাবজনিত রোগ: রক্তাল্পতা, স্নায়ুদৌর্বল্য, নিদ্রাল্পতা
৭. ভিটামিন B7 (বায়োটিন)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, দুধ, ডিম
অভাবজনিত রোগ: চুল পড়া, চর্মরোগ, বৃদ্ধিতে বাধা
৮. ভিটামিন B9 (ফলিক অ্যাসিড)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, সবুজ শাক
অভাবজনিত রোগ: রক্তাল্পতা, স্নায়ুর সমস্যা
৯. ভিটামিন B12 (সাইনোকোবালামিন)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: মাছ, মাংস, ডিম
অভাবজনিত রোগ: পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া, বৃদ্ধি ব্যাহত
১০. ভিটামিন C (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড)
দ্রাব্যতা: জলে দ্রাব্য
উৎস: আমলকী, লেবু, পেয়ারা, কমলা
অভাবজনিত রোগ: স্কার্ভি, দাঁতের সমস্যা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস
১১. ভিটামিন D (ক্যালসিফেরল)
দ্রাব্যতা: স্নেহ পদার্থে দ্রাব্য
উৎস: সূর্যের আলো, ডিমের কুসুম, মাছের তেল
অভাবজনিত রোগ: রিকেটস, হাড় দুর্বলতা, অস্টিওম্যালেশিয়া
১২. ভিটামিন E (টোকোফেরল)
দ্রাব্যতা: স্নেহ পদার্থে দ্রাব্য
উৎস: বাদাম, সরিষার তেল, বীজজাতীয় খাদ্য
অভাবজনিত রোগ: বন্ধ্যাত্ব, পেশির দুর্বলতা
১৩. ভিটামিন K (ফাইলোকুইনোন)
দ্রাব্যতা: স্নেহ পদার্থে দ্রাব্য
উৎস: পালং শাক, ফুলকপি, টমেটো
অভাবজনিত রোগ: রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা
ভিটামিনের অভাব আমাদের দেহে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রাকৃতিক খাদ্য উৎস থেকেই ভিটামিন সংগ্রহ করাই উত্তম, কারণ এটি আমাদের শরীরের জন্য অধিক কার্যকরী এবং নিরাপদ। সঠিক খাবারের মাধ্যমে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।