WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now
Instagram Join Now

প্রাণীদেহ বহু কোষীয় গঠনের অধিকারী, যেখানে প্রতিটি কোষের নির্দিষ্ট কাজ থাকে। কিন্তু শুধু কোষে সীমাবদ্ধ থাকলে দেহের বৃহৎ কাজসমূহ সম্ভব নয়। তাই কোষগুলো একত্রে গঠন করে টিস্যু, টিস্যুগুলি মিলে অঙ্গ, এবং একাধিক অঙ্গ মিলে গঠন করে অঙ্গতন্ত্র। এই অধ্যায় আমাদের শেখায় কীভাবে প্রাণীদেহে বিভিন্ন কাঠামো পারস্পরিক সম্পর্ক রেখে কাজ করে।


১. প্রাণীদেহের গঠন কাঠামো (Levels of Organisation)

প্রাণীদেহে কাজ করার জন্য একাধিক স্তর থাকে:

  1. কোষ (Cell) – গঠন ও কাজের একক
  2. টিস্যু (Tissue) – একই ধরনের কোষের সমষ্টি
  3. অঙ্গ (Organ) – একাধিক টিস্যু মিলে একটি অঙ্গ তৈরি করে
  4. অঙ্গতন্ত্র (Organ System) – একাধিক অঙ্গ একত্রে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে
  5. সম্পূর্ণ দেহ (Organism) – সব অঙ্গতন্ত্র মিলে একটি কার্যকর প্রাণীদেহ গঠন করে

উদাহরণ: মানুষের পাচনতন্ত্রে পাকস্থলী, অন্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয় – সব একসাথে কাজ করে খাবার হজম ও শোষণ করতে।


২. প্রাণীর টিস্যু (Animal Tissues)

(ক) ইপিথেলিয়াল টিস্যু (Epithelial Tissue)

এটি শরীরের ভেতরের ও বাইরের আবরণ তৈরি করে।
এর মূল কাজ: আবরণ দেওয়া, নিঃসরণ, শোষণ এবং সংবেদনশীলতা প্রদান।

প্রকারভেদ:

প্রকার গঠন অবস্থান কাজ
স্কোয়ামাস এক স্তরের চ্যাপ্টা কোষ গালের ভেতর, রক্তনালী সুরক্ষা
কিউবয়ডাল ঘনক আকৃতির কোষ কিডনির নালি নিঃসরণ ও শোষণ
কলামনার লম্বা স্তম্ভাকার কোষ অন্ত্র, গলব্লাডার শোষণ
সিলিয়েটেড সিলিয়া সহ কলামনার শ্বাসনালী কণাগুলি অপসারণ
গ্রন্থিমূলক নিঃসরণকারী কোষ ঘামগ্রন্থি, দুধ গ্রন্থি হরমোন/এনজাইম নিঃসরণ

(খ) সংযোগকারী টিস্যু (Connective Tissue)

এই টিস্যুর কাজ হলো দেহের বিভিন্ন অংশকে একত্রে সংযুক্ত ও সাপোর্ট করা।

প্রধান প্রকারভেদ:

  1. অ্যারোলার টিস্যু – ত্বকের নিচে, অঙ্গের মাঝে ফাঁকা অংশ পূরণে
  2. অ্যাডিপোজ টিস্যু – চর্বিযুক্ত, তাপ সংরক্ষণ করে
  3. রক্ত – তরল টিস্যু; অক্সিজেন, পুষ্টি বহন করে
  4. লিম্ফ – প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তরল টিস্যু
  5. হাড় (Bone) – ক্যালসিয়ামযুক্ত শক্ত কাঠামো, দেহের আকৃতি ধরে রাখে
  6. তরুণাস্থি (Cartilage) – নমনীয়, জোড়ায় cushioning প্রদান করে
  7. টেনডন পেশি ও হাড়ের সংযোগকারী
  8. লিগামেন্ট – হাড় ও হাড়ের মধ্যে সংযোগ

(গ) পেশি টিস্যু (Muscular Tissue)

এই টিস্যু শরীরকে গতি প্রদান করে। এর কোষগুলো দীর্ঘ, নমনীয় ও সংকোচনশীল।

প্রকারভেদ:

প্রকার গঠন ইচ্ছাধীন/অনইচ্ছাধীন অবস্থান কাজ
স্ট্রেইটেড ডোরাকাটা, বহু নিউক্লিয়াস ইচ্ছাধীন হাত-পা গতি
স্মুথ ডোরাহীন, এক নিউক্লিয়াস অনইচ্ছাধীন অন্ত্র, রক্তনালী অভ্যন্তরীণ গতি
কার্ডিয়াক ডোরাকাটা, ব্রাঞ্চযুক্ত অনইচ্ছাধীন হৃদপিণ্ড হৃদস্পন্দন বজায় রাখা

(ঘ) নার্ভ টিস্যু (Nervous Tissue)

উত্তেজনা গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ ও প্রতিক্রিয়া প্রদানে এটি গুরুত্বপূর্ণ। নিউরন একে অপরের সাথে সংযোগ করে নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে।

নিউরনের অংশ:

  • সেল বডি (Soma) – নিউক্লিয়াস সহ মূল অংশ
  • ডেনড্রাইট – তথ্য গ্রহণ করে
  • অ্যাক্সন – সংকেত বহন করে অন্য কোষে পাঠায়

৩. অঙ্গ ও অঙ্গতন্ত্র (Organs and Organ Systems)

একটি অঙ্গ একাধিক টিস্যুর সমন্বয়ে গঠিত এবং নির্দিষ্ট কাজ করে।
উদাহরণ:

  • পাকস্থলী – পেশি, এপিথেলিয়াল, স্নায়ু টিস্যু সমন্বয়ে হজম করে

একাধিক অঙ্গ মিলে অঙ্গতন্ত্র (Organ System) তৈরি করে।

মানুষের প্রধান অঙ্গতন্ত্র:

  1. পাচনতন্ত্র
  2. রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র
  3. শ্বাসতন্ত্র
  4. নিঃসরণ তন্ত্র
  5. স্নায়ুতন্ত্র
  6. প্রজননতন্ত্র

৪. মানুষের পাচনতন্ত্র (Human Digestive System)

মানব পাচনতন্ত্র একটানা নালি ও গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত। এটি খাদ্য গ্রহণ, হজম, পুষ্টি শোষণ ও বর্জ্য নির্গমন এর কাজ করে।

অংশভাগ ও কার্যপ্রণালী:

অংশ কাজ
মুখ দাঁত চিবিয়ে খাদ্য ভেঙে, লালা দিয়ে এনজাইম যুক্ত করে হজম শুরু
গ্রাসনালী খাদ্যকে পাকস্থলীতে নিয়ে যায় (Peristalsis)
পাকস্থলী অ্যাসিড ও এনজাইম (পেপসিন) দিয়ে প্রোটিন হজম শুরু
ক্ষুদ্রান্ত্র খাদ্য পুরোপুরি হজম ও শোষণ হয়; এনজাইম, পিত্ত, অগ্ন্যাশয় রস কাজ করে
বৃহদান্ত্র জল শোষণ হয়, ফাইবার ও অবশেষ জমা থাকে
মলদ্বার কঠিন বর্জ্য নির্গত হয়

সহায়ক গ্রন্থি:

  • যকৃত (Liver) – পিত্তরস তৈরি করে
  • অগ্ন্যাশয় (Pancreas) – হজমকারী এনজাইম তৈরি করে

৫. প্রস্তাবিত চিত্র (Diagram Suggestion)

  1. Types of Epithelial Tissue (5 ধরণ এক ছবিতে)
  2. Structure of Neuron
  3. Human Digestive System – নাম সহ অঙ্গগুলি নির্দেশ করে

সংক্ষিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট (Quick Revision Notes)

  • প্রাণীদেহে কোষ → টিস্যু → অঙ্গ → অঙ্গতন্ত্র → দেহ।
  • প্রধান চারটি টিস্যু – ইপিথেলিয়াল, সংযোগকারী, পেশি, স্নায়ু।
  • পাচনতন্ত্র মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গতন্ত্র; খাদ্য হজম, শোষণ ও নির্গমনের কাজ করে।
  • যকৃত, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি গ্রন্থি পাচনতন্ত্রকে সহায়তা করে।

উপসংহার

এই অধ্যায়টি প্রাণীর দেহ কাঠামোর মূল ভিত্তি রচনা করে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি একটি আবশ্যিক অধ্যায়, কারণ এটি পরবর্তী জীববিদ্যার অধ্যায়গুলির ভিত্তি স্থাপন করে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অঙ্গতন্ত্রের পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝা জীববিদ্যার একটি মৌলিক প্রয়োজন।

  • Tags: প্রাণীবিজ্ঞান, হিউম্যান বায়োলজি, পাচনতন্ত্র, টিস্যু টাইপস, উচ্চমাধ্যমিক জীববিজ্ঞান

Stay Connected with Us!

আমরা প্রতিদিন নতুন খবর, তথ্য এবং আপডেট শেয়ার করি। নিচের Telegram এবং WhatsApp চ্যানেলগুলোতে ক্লিক করে আপনি সহজেই আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

Share with Your Friends

By Anindita Saha

I’m a professional content writer at allinfoind.com, where I create well-researched, informative, and reader-friendly content. With a deep passion for writing and a strong focus on quality, my goal is to deliver articles that educate, engage, and add real value. I strive to present accurate information in a clear and accessible way, helping readers stay informed and empowered. For me, writing isn’t just a profession — it’s a way to make knowledge easier to understand and share.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *