জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) সংগ্রহ ভারতের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এবং কর সম্মতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। জুলাই ২০২৫-এর রাজ্যভিত্তিক জিএসটি সংগ্রহের তথ্য বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অর্থনৈতিক শক্তি এবং আঞ্চলিক বৈষম্য প্রতিফলন করে। এই ব্লগে আমরা জুলাই ২০২৫-এর জিএসটি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করব, যা শীর্ষ অবদানকারী রাজ্য, বৃদ্ধির প্রবণতা এবং এর পেছনের কারণগুলির একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে।
জুলাই ২০২৫-এ জিএসটি সংগ্রহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
জুলাই ২০২৫-এ জিএসটি সংগ্রহ ভারত জুড়ে অর্থনৈতিক গতিশীলতার প্রতিফলন ঘটায়। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং গুজরাটের মতো রাজ্যগুলি তাদের শিল্প, প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যিক পরিবেশের কারণে শীর্ষে রয়েছে। এদিকে, নাগাল্যান্ড এবং বিহারের মতো ছোট রাজ্যগুলি বছরে বছরে (YoY) উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখিয়েছে, যা কম শিল্পায়িত অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উন্নতির ইঙ্গিত দেয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ₹৫ কোটি টার্নওভারের ব্যবসায়ের জন্য বাধ্যতামূলক ই-ইনভয়েসিং প্রবর্তনের ফলে রিপোর্টিংয়ের নির্ভুলতা বেড়েছে, যা এই সংগ্রহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রাজ্যভিত্তিক জিএসটি সংগ্রহ: জুলাই ২০২৫
নীচে জুলাই ২০২৫-এ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জিএসটি সংগ্রহের তালিকা দেওয়া হলো, যা আয়ের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে:
- মহারাষ্ট্র – ₹৩০,৫৯০ কোটি
- বিশ্লেষণ: মহারাষ্ট্র শীর্ষে রয়েছে, যা মুম্বাই এবং পুনের মতো আর্থিক কেন্দ্রের জন্য পরিচিত। ব্যাংকিং, রিয়েল এস্টেট এবং উৎপাদন খাত এর বিপুল জিএসটি আয়ের প্রধান কারণ।
- কর্ণাটক – ₹১৩,৯৬৭ কোটি
- বিশ্লেষণ: বেঙ্গালুরুর আইটি এবং ই-কমার্স খাত কর্ণাটককে একটি প্রধান অবদানকারী রাজ্য করে তুলেছে। রাজ্যের প্রযুক্তি-চালিত অর্থনীতি ধারাবাহিক জিএসটি আয় নিশ্চিত করে।
- গুজরাট – ₹১১,৩৫৮ কোটি
- বিশ্লেষণ: গুজরাটের রাসায়নিক, টেক্সটাইল এবং রপ্তানি শিল্প এর জিএসটি সংগ্রহকে শক্তিশালী করেছে, যেখানে উৎপাদন এবং বাণিজ্যের উপর জোর দেওয়া হয়।
- তামিলনাড়ু – ₹১১,২৯৬ কোটি
- বিশ্লেষণ: ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল এবং টেক্সটাইলের বৈচিত্র্যময় শিল্প ভিত্তি তামিলনাড়ুকে শীর্ষ অবদানকারীদের মধ্যে রেখেছে।
- হরিয়ানা – ₹১০,১৪৯ কোটি
- বিশ্লেষণ: দিল্লির নৈকট্য এবং অটোমোটিভ ও লজিস্টিকস সহ শক্তিশালী শিল্প খাত হরিয়ানার জিএসটি আয় বাড়িয়েছে।
- উত্তরপ্রদেশ – ₹৯,৭৬০ কোটি
- বিশ্লেষণ: উত্তরপ্রদেশের টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরে ক্রমবর্ধমান শিল্প পার্ক এবং ভোক্তা ব্যয় এর জিএসটি সংগ্রহ বাড়িয়েছে।
- দিল্লি – ₹৬,০৫৭ কোটি
- বিশ্লেষণ: বাণিজ্যিক এবং সেবা কেন্দ্র হিসেবে দিল্লির জিএসটি আয় খুচরা, আতিথেয়তা এবং পেশাদার পরিষেবা দ্বারা চালিত।
- পশ্চিমবঙ্গ – ₹৫,৮৯৫ কোটি
- বিশ্লেষণ: শিল্প এবং বাণিজ্যিক কার্যকলাপের মিশ্রণ পশ্চিমবঙ্গের জিএসটি অবদান সমর্থন করে, যেখানে কলকাতা একটি মূল চালক।
- তেলেঙ্গানা – ₹৫,৪১৭ কোটি
- বিশ্লেষণ: হায়দ্রাবাদের রিয়েল এস্টেট এবং আইটি খাত তেলেঙ্গানার জিএসটি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ওড়িশা – ₹৪,৯৯১ কোটি
- বিশ্লেষণ: ওড়িশার খনিজ এবং শিল্প খাত এর জিএসটি সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
- রাজস্থান – ₹৪,৫৬৪ কোটি
- মধ্যপ্রদেশ – ₹৪,৩২৯ কোটি
- অন্ধ্রপ্রদেশ – ₹৩,৮০৩ কোটি
- ছত্তিশগড় – ₹৩,১৮০ কোটি
- ঝাড়খণ্ড – ₹৩,০৪০ কোটি
- কেরালা – ₹২,৭২১ কোটি
- পাঞ্জাব – ₹২,৩২৩ কোটি
- বিহার – ₹১,৮১৩ কোটি (+১২% YoY বৃদ্ধি)
- উত্তরাখণ্ড – ₹১,৭৭৪ কোটি
- আসাম – ₹১,৪৭০ কোটি
- হিমাচল প্রদেশ – ₹৯৫০ কোটি
- গোয়া – ₹৫৮৬ কোটি
- জম্মু ও কাশ্মীর – ₹৫৯৯ কোটি
- সিকিম – ₹৪০১ কোটি
- মেঘালয় – ₹১৭৮ কোটি
- অরুণাচল প্রদেশ – ₹৮৮ কোটি
- মণিপুর – ₹৪৩ কোটি
- ত্রিপুরা – ₹১০১ কোটি
- নাগাল্যান্ড – ₹৭০ কোটি (+৭১% YoY বৃদ্ধি)
- মিজোরাম – ₹৩১ কোটি
মূল প্রবণতা এবং পর্যবেক্ষণ
- মহারাষ্ট্রের আধিপত্য: ₹৩০,৫৯০ কোটি সংগ্রহের সাথে মহারাষ্ট্র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজ্য কর্ণাটকের প্রায় দ্বিগুণ অবদান রেখেছে। এটি ভারতের অর্থনৈতিক শক্তিঘর হিসেবে এর ভূমিকা প্রতিফলিত করে।
- নাগাল্যান্ডের অসাধারণ বৃদ্ধি: নাগাল্যান্ড ৭১% YoY বৃদ্ধি দেখিয়েছে, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সম্ভাবনা এবং উন্নত অবকাঠামোর ইঙ্গিত দেয়।
- বিহারের অগ্রগতি: বিহার ১২% YoY বৃদ্ধি সহ ₹১,৮১৩ কোটি সংগ্রহ করেছে, যা রাজ্যে ক্রমবর্ধমান শিল্প কার্যকলাপ এবং ভোক্তা ব্যয়ের ফল।
- দক্ষিণ ভারতের শক্তি: কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ তাদের প্রযুক্তি, উৎপাদন এবং সেবা খাতের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
- ই-ইনভয়েসিংয়ের প্রভাব: ₹৫ কোটি টার্নওভারের ব্যবসায়ের জন্য বাধ্যতামূলক ই-ইনভয়েসিং কর সংগ্রহের নির্ভুলতা বাড়িয়েছে এবং কর ফাঁকি কমিয়েছে।
জিএসটি সংগ্রহের চালিকাশক্তি
- অর্থনৈতিক কার্যকলাপ: খুচরা, অটোমোবাইল এবং রিয়েল এস্টেটে উচ্চ ভোক্তা চাহিদা মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের মতো রাজ্যে জিএসটি আয় বাড়িয়েছে।
- নীতি সংস্কার: ই-ইনভয়েসিং এবং এআই-ভিত্তিক অডিট ট্রেইলের মতো কঠোর সম্মতি ব্যবস্থা কর নেটকে প্রসারিত করেছে।
- আমদানি বৃদ্ধি: গুজরাটের মতো রাজ্যগুলি আমদানির উপর ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি (IGST) থেকে উপকৃত হয়েছে, যা এপ্রিল ২০২৫-এ ২০.৮% YoY বৃদ্ধি পেয়েছে।
- অর্থনীতির আনুষ্ঠানিকীকরণ: সরলীকৃত স্কিমের মাধ্যমে এমএসএমই এবং ফ্রিল্যান্সারদের ক্রমবর্ধমান জিএসটি গ্রহণ কর বেস বাড়িয়েছে।
জিএসটি সংগ্রহের প্রভাব
জুলাই ২০২৫-এর শক্তিশালী জিএসটি সংগ্রহ ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কার্যকর কর শাসনের প্রতিফলন। এই আয় কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলিকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অবকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থায়ন করতে সহায়তা করে। মহারাষ্ট্রের মতো উচ্চ অবদানকারী রাজ্য এবং মিজোরামের মতো ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে বৈষম্য সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এছাড়া, জিএসটি কাউন্সিলের চলমান আলোচনা, যেমন ১২% এবং ১৮% স্ল্যাবকে একত্রিত করে ১৫% স্ল্যাব তৈরি (২০২৫-এর মাঝামাঝি সম্ভাব্য), কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে পারে।
উপসংহার
জুলাই ২০২৫-এর রাজ্যভিত্তিক জিএসটি সংগ্রহ ভারতের গতিশীল অর্থনীতির একটি চিত্র তুলে ধরে। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং গুজরাট নেতৃত্ব দিচ্ছে, যেখানে নাগাল্যান্ড এবং বিহারের মতো রাজ্যগুলি প্রতিশ্রুতিশীল বৃদ্ধি দেখাচ্ছে। ই-ইনভয়েসিং এবং সম্ভাব্য স্ল্যাব রেশনালাইজেশনের মতো ডিজিটাল কর সংস্কারের সাথে, জিএসটি সংগ্রহ ভারতের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের একটি নির্ভরযোগ্য সূচক হিসেবে থাকবে। ব্যবসায়ী এবং নীতিনির্ধারকদের এই প্রবণতাগুলি ব্যবহার করে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে তৎপর থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র: জিএসটি কাউন্সিলের প্রতিবেদন এবং অনলাইন প্রকাশনা থেকে সংগৃহীত তথ্য।
Stay Connected with Us!
আমরা প্রতিদিন নতুন খবর, তথ্য এবং আপডেট শেয়ার করি। নিচের Telegram এবং WhatsApp চ্যানেলগুলোতে ক্লিক করে আপনি সহজেই আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।