ভারতে কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা বহুদিন ধরেই চলছে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে PLFS (Periodic Labour Force Survey) রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের বেকারত্বের হার মাত্র ৩.২%। ২০১৭-১৮ সালে এই হার ছিল প্রায় ৬%।
এই তথ্যটি সরকারিভাবে প্রকাশ পায় অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪-২৫ (Economic Survey 2024-25)-এ। এটি একটি ঐতিহাসিক উন্নতি, যদিও এই পরিসংখ্যান ব্যাখ্যা করতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বুঝে নিতে হবে।
কী বলছে PLFS রিপোর্ট?
PLFS রিপোর্ট বছরে একবার প্রকাশিত হয় এবং এটি ‘usual status (ps+ss)’ মডেলে বেকারত্বের হার নির্ধারণ করে। অর্থাৎ, বিগত এক বছরে ব্যক্তি কতদিন কাজ পেয়েছেন বা পাননি—সেই হিসেবেই বেকারত্ব গণনা হয়।
প্রধান তথ্য:
- বার্ষিক বেকারত্ব (২০২৩-২৪): ৩.২%
- নারী শ্রমশক্তি অংশগ্রহণ (LFPR): ৪১.৭% (২০১৭-১৮ সালে ছিল মাত্র ২৩.৩%)
- পুরুষ শ্রমশক্তি অংশগ্রহণ: ৭৫.9%
- EPFO তে নতুন কর্মীর সংখ্যা: বেড়েছে, যা প্রমাণ করে আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি তৈরি হচ্ছে।
মাসভিত্তিক unemployment রিপোর্ট: বাস্তবচিত্র ভিন্ন?
ভারত সরকার ২০২৫ সাল থেকে মাসভিত্তিক শ্রমশক্তি পরিসংখ্যান (Monthly Employment Statistics) প্রকাশ শুরু করেছে, যা PLFS থেকে আলাদা এবং কম সময়ের ভিত্তিতে গণনা করা হয় (Current Weekly Status)।
মাস | বেকারত্ব হার |
---|---|
এপ্রিল ২০২৫ | ৫.১% |
মে ২০২৫ | ৫.৬% |
কী কারণে মে-তে বেকারত্ব বেড়েছে?
- রবি ফসল তোলা শেষ, ফলে গ্রামাঞ্চলে চাহিদা কমে গেছে।
- অতিরিক্ত গরমে নির্মাণ ও পরিবহন খাতে কাজ কমে গেছে।
- শহরাঞ্চলে চাকরির প্রতিযোগিতা বাড়ছে, বিশেষ করে যুবদের মধ্যে।
যুব বেকারত্ব – বড় চ্যালেঞ্জ
“ভারতের মোট বেকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশই যুবক–যুবতী।”
- ১৫–২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্ব:
- শহর: ১৭.৯%
- গ্রাম: ১৩.৭%
যদিও সার্বিক হারে উন্নতি হয়েছে, কিন্তু শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে এখনো উচ্চ বেকারত্ব রয়েছে।
রাজ্যভিত্তিক বেকারত্বের চিত্র (মে ২০২৫ অনুযায়ী, CMIE রিপোর্ট)
রাজ্য | বেকারত্বের হার |
---|---|
রাজস্থান | ১০.১% |
হরিয়ানা | ৯.৩% |
কেরল | ৮.৮% |
গুজরাট | ৩.২% |
মহারাষ্ট্র | ৩.৫% |
পশ্চিমবঙ্গ | ৪.১% |
দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে বেকারত্ব তুলনামূলকভাবে কম।
নারী কর্মসংস্থান বৃদ্ধি – কেবল সংখ্যায় নয়, ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য
নারীদের কাজের পরিধি এখন শুধুমাত্র কৃষি নয়। তারা এখন প্রবেশ করছে:
- স্বাস্থ্য সেবা (ANM, GNM, ASHA)
- শিক্ষা
- ই-কমার্স, রিমোট ওয়ার্ক
- উদ্যোক্তা ক্ষেত্র
সরকারী প্রকল্প যেমন Skill India, Start-Up India, ও PM Kaushal Vikas Yojana-র প্রভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কী বলছে বিশেষজ্ঞরা?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন PLFS-এর ৩.২% হার বাস্তবের থেকে কম:
- অনেক আংশিক কর্মসংস্থানকেও ‘চাকরি’ হিসাবে ধরা হচ্ছে।
- ‘গোপন বেকারত্ব (disguised unemployment)’ বাড়ছে—বিশেষ করে কৃষিতে।
- কন্ট্রাক্ট বেসড ও অনানুষ্ঠানিক চাকরির সংখ্যা বেশি, ফলে কর্মীদের সুরক্ষা নেই।
ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
- ২০২৫-২৬ সালে চাকরি বৃদ্ধির হার নির্ভর করবে:
- মুদ্রানীতি ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কি না
- প্রযুক্তিগত খাতে নিয়োগ বাড়ে কি না
- গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হয় কি না
- AI এবং Automation বৃদ্ধির ফলে নিম্নস্তরের কাজ কমবে, ফলে স্কিল আপগ্রেডেশন প্রয়োজন
উপসংহার
- PLFS রিপোর্ট অনুযায়ী বেকারত্বের হার কমেছে, তবে বাস্তবের চিত্র আরও জটিল।
- PLFS ও মাসভিত্তিক রিপোর্ট—দুটিই গুরুত্বপূর্ণ, তবে ব্যাখ্যার ধরন আলাদা।
- নারীরা উল্লেখযোগ্যভাবে শ্রমশক্তিতে যোগ দিচ্ছেন, যা এক ইতিবাচক পরিবর্তন।
- যুব সমাজ ও শহরাঞ্চলে এখনো বেকারত্ব বড় সমস্যা।
- সরকারের উচিত মাসিক বেকারত্ব রিপোর্টকে আরও কার্যকর করা ও খাতভিত্তিক কর্মসংস্থানের দিশা দেওয়া।
Stay Connected with Us!
আমরা প্রতিদিন নতুন খবর, তথ্য এবং আপডেট শেয়ার করি। নিচের Telegram এবং WhatsApp চ্যানেলগুলোতে ক্লিক করে আপনি সহজেই আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।