প্রাকৃতিক সম্পদ—একটি দেশের আসল শক্তি
একটি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতা শুধু জিডিপি বা প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে না।
আসল শক্তি লুকিয়ে থাকে সেই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদে — যেখানে তেল, গ্যাস, কয়লা, খনিজ, কাঠ থেকে শুরু করে পানির উৎস পর্যন্ত সবকিছু ভূমিকা রাখে।
এই সম্পদগুলোই নির্ধারণ করে ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা, শিল্প উন্নয়ন এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব।
২০২1 সালের Statista রিপোর্ট অনুযায়ী, নিচে দেওয়া হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী শীর্ষ ১০টি দেশ
শীর্ষ ১০ দেশ প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্যে
| ক্রম | দেশ | আনুমানিক মূল্য (US Dollar) |
|---|---|---|
| 1️⃣ | 🇷🇺 রাশিয়া (Russia) | $75 Trillion |
| 2️⃣ | 🇺🇸 যুক্তরাষ্ট্র (USA) | $45 Trillion |
| 3️⃣ | 🇸🇦 সৌদি আরব (Saudi Arabia) | $34 Trillion |
| 4️⃣ | 🇨🇦 কানাডা (Canada) | $33 Trillion |
| 5️⃣ | 🇮🇷 ইরান (Iran) | $27 Trillion |
| 6️⃣ | 🇨🇳 চীন (China) | $23 Trillion |
| 7️⃣ | 🇧🇷 ব্রাজিল (Brazil) | $22 Trillion |
| 8️⃣ | 🇦🇺 অস্ট্রেলিয়া (Australia) | $20 Trillion |
| 9️⃣ | 🇮🇶 ইরাক (Iraq) | $16 Trillion |
| 🔟 | 🇻🇪 ভেনেজুয়েলা (Venezuela) | $14 Trillion |
Source: Statista (As of 2021)
🏔️ রাশিয়া – প্রাকৃতিক সম্পদের সাম্রাজ্য
রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে।
প্রায় সব ধরনের সম্পদ— তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, কাঠ, এবং সোনা— রাশিয়ার ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
বিশ্বের প্রায় ২০% প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার রাশিয়ার দখলে, যা দেশটিকে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি করে তুলেছে।
🇺🇸 যুক্তরাষ্ট্র – প্রযুক্তি আর সম্পদের যুগলবন্দি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু অনেকেই জানেন না প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকেও দেশটি দ্বিতীয় স্থানে।
প্রচুর কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, শেল অয়েল, এবং বিরল ধাতু যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের মূল ভিত্তি।
এগুলো দেশের শক্তি উৎপাদন, শিল্পায়ন ও বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
🛢️ সৌদি আরব – তেলের রাজা
সৌদি আরব মানেই তেল।
দেশটির মোট প্রাকৃতিক সম্পদের প্রায় ৯০% আসে তেল রপ্তানি থেকে।
প্রচুর পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার সৌদি আরবকে তেলের বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রে এনে রেখেছে।
🍁 কানাডা – বন, তেল, খনিজের দেশ
বিশাল বনভূমি, তেল বালু, ইউরেনিয়াম, এবং খনিজ সম্পদ—
সব মিলিয়ে কানাডার প্রাকৃতিক সম্পদমূল্য $33 ট্রিলিয়ন।
এটি বিশ্বের অন্যতম পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি হলেও, সম্পদের দিক থেকে কানাডা অনেক বড় খেলোয়াড়।
🏭 চীন ও ইরান – শিল্প ও জ্বালানি শক্তির ভারসাম্য
চীনের সম্পদমূল্য প্রায় $23 ট্রিলিয়ন।
বিশাল কয়লার ভাণ্ডার, বিরল ধাতু, এবং খনিজ সম্পদ দেশটিকে শিল্প উৎপাদনে এগিয়ে রেখেছে।
অন্যদিকে, ইরান তার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভের জন্য বিশ্বে পঞ্চম স্থানে, সম্পদমূল্য $27 ট্রিলিয়ন।
🌾 ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া – কৃষি ও খনিজের শক্তি
ব্রাজিলের সমৃদ্ধ কৃষি, বন, এবং লোহা আকরিক তাদের অর্থনীতির ভিত্তি।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম খনিজ শক্তি, যার সোনা, লোহা, ও কয়লার রপ্তানি মূল্য $20 ট্রিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
কেন এই তালিকা গুরুত্বপূর্ণ?
এই তালিকা কেবল সংখ্যা নয় — এটি বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশ করে।
যে দেশগুলির প্রাকৃতিক সম্পদ বেশি, তারা ভবিষ্যতের জ্বালানি রাজনীতি, প্রযুক্তি সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক কূটনীতি নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।
যেমন, তেল ও গ্যাসের বাজারে রাশিয়া ও সৌদি আরবের প্রভাব যেমন দৃশ্যমান,
তেমনি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ-নির্ভর শিল্প উৎপাদন বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে চলেছে।
শেষ কথা
প্রাকৃতিক সম্পদ কেবল অর্থের হিসাব নয় — এটি একটি দেশের ভবিষ্যৎ শক্তির প্রতীক।
যে দেশগুলো এখন এই সম্পদের সঠিক ব্যবহার করছে, তারাই আগামী দশকে হবে বিশ্বের নেতৃত্বে।