দীপাবলি মানেই আলো আর আনন্দের উৎসব।
প্রতি বছর এই উৎসবের সময় গোটা দেশ আলোকিত হয়ে ওঠে — ঘরবাড়ি, মন্দির, রাস্তা, সব জায়গায় আলো ঝলমল করে। কিন্তু আলোয় ভরা এই রাতের পরের সকালটা অনেক সময় আমাদের শ্বাসকষ্টে ভরে যায়। কারণ, দীপাবলির আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে দেশে বেড়ে যায় বায়ুদূষণের মাত্রা।
ভারতের পোস্ট-দীপাবলি AQI মানচিত্রে যা দেখা যাচ্ছে
গুগল ম্যাপের এই তথ্য অনুযায়ী, উত্তর ভারতের পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক।
- Delhi NCR ও আশপাশের এলাকা (Noida, Gurugram, Ghaziabad) প্রায় সব জায়গায় AQI ৪০০-এর ওপরে, যা “Severe” স্তর হিসেবে গণ্য হয়।
- Punjab, Haryana, Uttar Pradesh, Bihar – এই রাজ্যগুলোর বড় অংশেও লাল ও কমলা অঞ্চল ছড়িয়ে আছে।
- তুলনামূলকভাবে South India–র শহরগুলো যেমন Bengaluru, Chennai, Hyderabad – অনেকটা ভালো অবস্থায় আছে।
- Western India–র অংশ যেমন Mumbai ও Gujarat-এ AQI মাঝারি পর্যায়ে রেকর্ড করা হয়েছে।
AQI আসলে কী বোঝায়?
AQI (Air Quality Index) হলো বাতাসে উপস্থিত দূষণকারীর মাত্রা বোঝানোর একটি আন্তর্জাতিক মান।
সংখ্যা যত বাড়ে, বাতাসের মান তত খারাপ হয়। নিচে এর রেঞ্জ ও মানে দেওয়া হলো:
| AQI মান | বায়ুর গুণমান | মন্তব্য |
|---|---|---|
| 0–50 | ভালো (Good) | সাধারণের জন্য নিরাপদ |
| 51–100 | মাঝারি (Moderate) | সংবেদনশীলদের জন্য সামান্য প্রভাব |
| 101–200 | অস্বাস্থ্যকর (Unhealthy for Sensitive) | শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ক্ষতিকর |
| 201–300 | খারাপ (Poor) | শ্বাসকষ্ট হতে পারে |
| 301–400 | খুব খারাপ (Very Poor) | শ্বাসযন্ত্রে প্রভাব |
| 401–500 | ভয়াবহ (Severe) | গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি |
দীপাবলির পর দূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ
প্রতি বছর দীপাবলির পরে কেন AQI হঠাৎ আকাশছোঁয়া হয়, এর কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- আতশবাজি ও ফায়ারওয়ার্কস: দীপাবলির রাতে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ ঘটে এই উৎস থেকেই।
- স্টাবল বার্নিং (খেত পোড়ানো): পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকেরা ধান কাটার পর খেতের খড় পোড়ান, যা ধোঁয়া তৈরি করে।
- ঠান্ডা আবহাওয়া ও কম বায়ুপ্রবাহ: এই সময়ে বাতাসের গতিবেগ কম থাকায় দূষণ জমে যায়।
- গাড়ি ও শিল্প দূষণ: শহরাঞ্চলে গাড়ির নির্গমন ও কারখানার ধোঁয়া পরিস্থিতি আরও খারাপ করে।
এর প্রভাব আমাদের জীবনে
খারাপ AQI মানে শুধু আকাশ ধোঁয়াটে হওয়া নয়, এটা সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে।
বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ এবং যাঁরা শ্বাসকষ্ট বা হৃদরোগে ভোগেন, তাঁদের জন্য এটি বিপজ্জনক।
এর ফলে হতে পারে:
- চোখ জ্বালা ও গলা জ্বালা
- কাশি ও শ্বাসকষ্ট
- দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের সমস্যা
- রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি AQI “Severe” পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন বাইরে কম সময় থাকা ও মাস্ক ব্যবহার করা অপরিহার্য।
কীভাবে দূষণ কমানো সম্ভব
আমরা চাইলে নিজেদের থেকেই কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বায়ুদূষণ কমাতে পারি:
আতশবাজির ব্যবহার যতটা সম্ভব সীমিত রাখা
গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা কারপুল বেছে নেওয়া
ঘরের আশেপাশে গাছ লাগানো
মাস্ক ব্যবহার ও ইনডোর প্ল্যান্ট রাখা
সরকারি ও স্থানীয় পরিবেশ প্রচারণায় অংশ নেওয়া
এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো মিলে অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
শেষ কথা
দীপাবলি আমাদের জীবনে আলো ও আনন্দের উৎসব, কিন্তু তার পরের দিনের ধোঁয়া যেন এই আলোকে ঢেকে না ফেলে।
Post-Diwali AQI Map of India আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে — আনন্দের সঙ্গে দায়িত্বও নিতে হয়।
যদি এখন থেকেই সচেতন না হই, ভবিষ্যতের দীপাবলি হয়তো আলো নয়, কুয়াশা ও ধোঁয়ায় ঢেকে যাবে