NISAR কী?
NISAR বা NASA–ISRO Synthetic Aperture Radar হল পৃথিবী পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি একটি অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট, যা NASA এবং ISRO যৌথভাবে নির্মাণ করেছে। এটি পৃথিবীর ভূমি ও বরফ আচ্ছাদিত এলাকার প্রতি ১২ দিন অন্তর পূর্ণ স্ক্যান করবে। স্যাটেলাইটটি তৈরি হয়েছে দুই দেশের মিলিত প্রযুক্তিগত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার ভিত্তিতে। এটি কেবল একটি স্যাটেলাইট নয়, বরং একটি বৈজ্ঞানিক বিপ্লব। এর মাধ্যমে climate change, ভূমিকম্প, হিমবাহ গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, বনাঞ্চলের পরিমাণ ও কৃষি জমির পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে, যা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ভূমিকা রাখবে।
৩০ জুলাই ২০২৫: উৎক্ষেপণের তারিখ
NISAR স্যাটেলাইটটি ২০২৫ সালের ৩০ জুলাই ভারতের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই মিশনের জন্য ব্যবহার করা হবে ISRO‑র GSLV-F16 রকেট। উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য সময় বিকেল ৫:৪০ মিনিট IST। স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর ৭৪৩ কিলোমিটার উচ্চতায় Sun-synchronous orbit-এ স্থাপন করা হবে, যার মাধ্যমে এটি একই আলো-ছায়ার কোণ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
NASA এবং ISRO-এর দায়িত্ব ভাগ
এই মিশনে NASA এবং ISRO-এর কাজ স্পষ্টভাবে ভাগ করা হয়েছে। NASA তৈরি করেছে L-band রাডার, বিশাল deployable reflector, শক্তিশালী ডেটা রেকর্ডার এবং টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। অন্যদিকে ISRO তৈরি করেছে S-band রাডার, স্যাটেলাইটের বাস ও উৎক্ষেপণ সাপোর্ট সিস্টেম। এটি ভারতের জন্য গর্বের বিষয় যে, এই আন্তর্জাতিক মিশনে আমাদের দেশের মহাকাশ সংস্থা এত বড় ভূমিকা পালন করছে।
কত ব্যয়বহুল এই স্যাটেলাইট?
এই প্রকল্পের মোট খরচ প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার — যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ₹১২,৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে NASA ব্যয় করছে প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলার, আর ISRO ব্যয় করছে প্রায় ₹৮০০ কোটি টাকা। এই ব্যয়বহুল প্রকল্পটি পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামী, যা এটিকে “world’s most expensive Earth observation satellite” বানিয়েছে।
কেন এই স্যাটেলাইট এত গুরুত্বপূর্ণ?
NISAR পৃথিবীর উপর যেকোনো ধরনের পরিবর্তন যেমন ভূকম্পন, ভূমিধস, হিমবাহ গলন, বন উজাড়, কৃষিজমির অবস্থান পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়মিত ট্র্যাক করবে। এতে করে আমরা দ্রুত দুর্যোগের পূর্বাভাস পেতে পারব এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারব। এছাড়াও এটি পরিবেশগত গবেষণা, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এই ডেটা শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের গবেষক ও প্রশাসকদের উপকারে আসবে।
উৎক্ষেপণের পর কী হবে?
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর প্রথম ৯০ দিন থাকবে commissioning phase, যাকে বলা হয় In-Orbit Checkout (IOC)। এই সময়ের মধ্যে স্যাটেলাইটের সব যন্ত্রপাতি ও সেন্সরের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে। এই ধাপে ক্যালিব্রেশন ও প্রাথমিক ডেটা বিশ্লেষণ করা হবে, যাতে পরবর্তীতে নির্ভরযোগ্যভাবে তথ্য পাঠানো সম্ভব হয়।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অনন্য দৃষ্টান্ত
২০১৪ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল NASA ও ISRO‑র এই যুগ্ম মিশন। এর মধ্য দিয়ে দুটি দেশের মধ্যে মহাকাশ প্রযুক্তিতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা আরও মজবুত হয়েছে। এই স্যাটেলাইট শুধু বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতা নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উপসংহার
NISAR শুধুমাত্র একটি স্যাটেলাইট নয়, এটি এক নতুন যুগের সূচনা। এটি আমাদের পৃথিবীকে নতুন চোখে দেখার সুযোগ দেবে — যেখানে প্রতিটি পরিবর্তন ধরা পড়বে সূক্ষ্মভাবে, আর আমরা সেই অনুযায়ী আগাম প্রস্তুতি নিতে পারব। NASA ও ISRO-এর এই যৌথ প্রয়াস আমাদের দেখায়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কিভাবে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
Stay Connected with Us!
আমরা প্রতিদিন নতুন খবর, তথ্য এবং আপডেট শেয়ার করি। নিচের Telegram এবং WhatsApp চ্যানেলগুলোতে ক্লিক করে আপনি সহজেই আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।