ভারতের বৃহত্তম আইটি কোম্পানি Tata Consultancy Services (TCS) ঘোষণা করেছে যে, এখন থেকে কোনো কর্মী যদি কোনও প্রজেক্টে যুক্ত না থাকেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ৩৫ দিন পর্যন্ত ‘বেঞ্চে’ থাকতে পারবেন। এর পর সেই কর্মীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কোম্পানি।
এর আগে এই সীমা অন্তত ৬০-৯০ দিন পর্যন্ত থাকত, এমনকি বিশেষ পরিস্থিতিতে আরও বেশি দিনও বেঞ্চে থাকা যেত।
“বেঞ্চ” কী?
আইটি কোম্পানিতে “বেঞ্চে থাকা” অর্থ হল কর্মী বর্তমানে কোনও ক্লায়েন্ট প্রজেক্টে নিযুক্ত নন। অর্থাৎ তিনি standby-তে আছেন, প্রজেক্ট আসা মাত্রই তাঁকে কাজ ধরতে বলা হবে।
তবে বেঞ্চে থাকা মানে এই নয় যে কর্মী অদক্ষ – বরং এটি অনেক সময় প্রজেক্টের অভাব বা ক্লায়েন্ট দেরির ফল।
এই নতুন নিয়মে কী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে?
- ১. চাকরি হারানোর আতঙ্ক:
৩৫ দিনের মধ্যে প্রজেক্ট না পেলে কর্মীদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে মানসিক চাপ বেড়েছে।
- ২. নতুন প্রজেক্টে সিলেকশনের প্রতিযোগিতা বাড়ছে:
সবাই দ্রুত প্রজেক্টে ঢুকতে চাইছে, যার ফলে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা ও চাপ বেড়েছে।
- ৩. রোল মিসম্যাচ ও স্কিল গ্যাপ:
সব কর্মীর দক্ষতা সব প্রজেক্টের জন্য উপযুক্ত নয়। এই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রোফাইল অনুযায়ী প্রজেক্ট না পেলে ৩৫ দিনের মধ্যে স্থির হওয়া কঠিন।
- ৪. কর্মীদের হতাশা ও লয়্যালটি কমে যাওয়া:
অনেক সিনিয়র কর্মী বা দক্ষ ব্যক্তি কোম্পানির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন, কারণ তাদের অবদান সত্ত্বেও অনিরাপত্তা তৈরি হয়েছে।
কোম্পানির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা
TCS বলছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হল—
- “বেঞ্চ ম্যানেজমেন্ট” আরও দক্ষ করা
- ক্লায়েন্ট ডেলিভারি সময়মতো করতে কর্মীদের প্রস্তুত রাখা
- অপচয় ও খরচ কমানো
- স্কিল মেলানোর জন্য দ্রুত কর্মী পুনঃনিয়োগ
TCS-এর বক্তব্য: “প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের workforce agile ও dynamic হতে হবে।”
কী কারণে এই কঠোর নীতি?
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা
- ক্লায়েন্ট খরচে কাটছাঁট
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন-এর কারণে manpower এর প্রয়োজন কিছু ক্ষেত্রে কমে যাওয়া
- নতুন নিয়োগ বন্ধ রেখে অভ্যন্তরীণ কর্মীদের রি-স্কিল ও পুনর্ব্যবহার
কর্মীদের জন্য পরামর্শ
পদক্ষেপ | ব্যাখ্যা |
---|---|
Re-skill | নতুন প্রযুক্তি বা ক্লায়েন্ট চাহিদা অনুযায়ী স্কিল শেখা |
Project Marketplace ব্যবহার | TCS-এর অভ্যন্তরীণ প্ল্যাটফর্মে প্রজেক্ট খোঁজা |
Certification & Training | Azure, AWS, Data Science, SAP, GenAI ইত্যাদি ক্ষেত্রের ট্রেনিং করা |
Manager-এর সঙ্গে proactive যোগাযোগ | তাদের জানানো যে আপনি প্রস্তুত ও আগ্রহী |
অন্য কোম্পানির সুযোগ open রাখা | চাকরি সুরক্ষিত না থাকলে বিকল্প প্ল্যান রাখা |
অনুরূপ প্রবণতা অন্যান্য আইটি কোম্পানিতেও
- Infosys: বেঞ্চ নীতিতে কড়াকড়ি এনেছে, নতুন নিয়োগ কমেছে।
- Wipro: কর্মীদের পারফরম্যান্স ট্র্যাকিংয়ে আরও নজর দিচ্ছে।
- HCL, Tech Mahindra: নতুন প্রজেক্ট এলেই আগে থেকেই স্কিল ম্যাপিং শুরু করছে।
উপসংহার
TCS-এর নতুন বেঞ্চ নীতি আধুনিক আইটি শিল্পে একটি বড় পরিবর্তনের প্রতীক। এটি কর্মীদের দ্রুত দক্ষ হতে শেখাবে বটে, তবে চাপ ও অনিশ্চয়তা বাড়বে বলেই মনে করছেন অনেকেই।
এই পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস, প্রস্তুতি ও স্মার্ট মুভ নেওয়াটাই কর্মীদের টিকে থাকার চাবিকাঠি।
Stay Connected with Us!
আমরা প্রতিদিন নতুন খবর, তথ্য এবং আপডেট শেয়ার করি। নিচের Telegram এবং WhatsApp চ্যানেলগুলোতে ক্লিক করে আপনি সহজেই আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।